‘রাজা আসে রাজা যায়
আমজনতা আমই রয়’
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার হাত বদল হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। যা আমরা ইতিহাসে ৬৯ এবং ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে দেখতে পাই। শুধুমাত্র আমাদের গণঅভ্যুত্থানগুলোই নয় বিভিন্ন দেশের গণঅভ্যুত্থানের একই চরিত্র। উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিক কালের শ্রীলঙ্কার গণঅভ্যুত্থানের কথা যেমন বলা যায় তেমনি ভাবে রুশ বিপ্লব থেকে আরব বসন্ত প্রতিটি বিপ্লবেই হাজারো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ক্ষমতার হাত বদল হলেও সাধারণ জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এখন প্রশ্ন হলো এবারও কি প্রায় ২ হাজার শহীদের রক্তে হাত ভিজিয়ে আমরা একই পথে হাঁটছি?
গত ১ বছরে আমাদের যে পরিবর্তনের চিত্র—
🛑 দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি – সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি এখনো বন্ধ হয়নি!
🛑চাকরির সংকট – শিক্ষিত তরুণরা কাজের অভাবে দিশেহারা!
🛑নিম্ন মজুরি, উচ্চ ব্যয় – মঞ্চে হাততালি পাওয়া নেতাদের সেদিকে নজর নেই!
🛑শিক্ষার দুরবস্থা – যা শিখি তা কোনো কাজে লাগে না!
🛑স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম – সরকারি হাসপাতালে ঔষধ থাকে না!
🛑রাজনৈতিক অন্ধত্ব – মানুষের সেবা নয়, স্বার্থহাসিল করায় পরম ধর্ম!
🛑আমলাতন্ত্র – পা চাটা কেরানিরা নতুন দলে ভিড় করেছে!
কাটাকাটির রাজনীতিতে আমরা বলা যায় পুরাদস্তুর ওস্তাদ। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম কেটে জিয়ার বাংলাদেশ, ভাসানীর বাংলাদেশ, এরশাদের বাংলাদেশ, মওদুদীর বাংলাদেশ, পীর সাহেব চরমোনাই এর বাংলাদেশ কিংবা শাহজালাল (রহ.) বাংলাদেশ লিখলেই আমরা মনে করি দেশ পরিবর্তন হয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি হয়ে গেছে।
কেবল তাই নয়, ক্ষমতার হাত বদলের সাথে সাথে টাকায় থাকা ছবি থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিমানবন্দর, রাস্তা, সেতু, এমনকি পাঠ্যবইয়ের গল্প,কবিতা,ইতিহাস পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে যায়। আর কাটাকাটির এই মহা উৎসবের হাজার কোটি টাকা যোগান দিতে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষ ৭০/৮০ টাকা কেজি চাল কিনতে না পেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে ইহজগৎ এর কষ্ট লাগব করে।
আমাদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা হলো ৭২ এর সংবিধান একটি ধর্মগ্রন্থ। জনগণের উপরে যে পৃথিবীতে কোনো সংবিধান নেই তা আমরা মুখে বলি শুধুমাত্র হাতে তালি পাওয়ার জন্য। অথচ স্বার্থ রক্ষার্থেই সব ভুলে যায়।
৫ আগস্টের পর থেকে আমরা সবাই আছি নির্বাচন নিয়ে। এদেশে নির্বাচনে জনগণের কি যায় আসে? নেতাদের মুখে শুধু ভোটের কথা। ভাতের কথা তো কারো মুখে শুনি না। আমরা ভাবি নির্বাচন হলেই হয়ত দেশ বদলে যাবে। অথচ যে, এদেশের সরকারি আমলা থেকে মহান রাজনৈতিক নির্বোধ নেতা, সুযোগ সন্ধানী জনগণ, বুদ্ধি বিক্রি করা বুদ্ধিজীবি প্রত্যেকেরই যে নিজেকে পরিবর্তন করা প্রয়োজন তা আমরা বুঝি না অথবা বুঝতে চাই না।
আমরা সারাক্ষণ ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিবাদ করছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ পালানোর পরও এখনো কেন চাঁদাবাজি, দালালি বন্ধ হচ্ছে না সে বিষয়ে কেউ কথা বলছি না। আওয়ামী লীগ তো এখন আর এই চাঁদা তুলছে না তাহলে নিশ্চয়ই বিএনপি নয়তো জামাত শিবির নাহলে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ কিংবা সক্রিয় অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অথবা পুলিশ প্রশাসন এই চাঁদাবাজি করছে। আর যদি তারা নিজেরা না করেও থাকে তাহলে তারা জোরালো প্রতিবাদ না করে নির্লজ্জের মত এর সাপোর্ট করছে।
এত এত রাজনৈতিক দল তাদের এত এত কর্মী সমর্থক, এত এত পুলিশ, র্যাব, আনসার এমনকি মাঠে সেনাবাহিনী থাকা সত্ত্বেও খুন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, দূর্নীতি, মাদক-জুয়া, অন্যায়, জুলুম কমছে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছর না পেরুতেই এখনো সরকারি নাগরিক সেবার অফিসগুলোতে বকশিস (২০-৫০০ টাকার ছোট ঘুষ) না দিলে কাজ হয় না। সরকারি হাসপাতালে প্রথমে সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আনসার, নার্স, ওয়ার্ড বয় এর হাতে ৫০/১০০ টাকা গুঁজে দিতে হয়।
সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর, ব্যাংক প্রতিষ্ঠানে এখন আওয়ামী লীগের ব্যানার,সাইনবোর্ডের জায়গায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ব্যানার,সাইনবোর্ড বসেছে। একদলের পা চাটা বন্ধ না হতেই এখন সবাই আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের পা চাটাচাটি করছে। অথচ হাজারো শহীদ যে স্বপ্ন আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অকালে জীবন দিল তা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। পা চাটা শ্রেণী আছে তাদের নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত।
কাজেই স্বপ্নের বৈষম্যহীন, অপরাধমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে বিগত দিনের স্বৈরাচারী খুনিদের যেমন বিচারের বিকল্প নেই তেমনি ভাবে নিজেদেরকে পরিবর্তনেরও কোনো বিকল্প নেই। আমরা নিজেরা যদি না বদলাই, নাম কেটে ছিঁড়ে দেশ বদলানো যাবে না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও উত্তাল সেইসব দিনগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করতে ‘৩৬ শে জুলাই’ বইটি এখই সংগ্রহ করুন।
Reviews
There are no reviews yet.