প্রকৃতিকন্যার সাথে প্রেম
মুহাম্মদ বাবলু
ওর সাথে আমার অনেকদিনের প্রেম। কলেজ জীবনেই যে প্রেমের শুরু হয়েছিল। কিন্তু ও থাকতো চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। ফাল্গুনী হাওয়ার দিনে আমাদের কেবল চিঠি আদান-প্রদান হত। তবে ওকে দেখার জন্য আমি চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতাম৷ শেষে একদিন চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষে আমি পথ-ঘাট,নদী পার হয়ে ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বলেছিলাম, প্রকৃতিকন্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তবে কিভাবে আমি সেদিন প্রকৃতিকন্যার কাছে গিয়েছিলাম তা আজ জানাব আপনাদেরকে।
ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ১১:৪৫ এর মেইল ট্রেইনের টিকেট কাটলাম ১২০ টাকা দিয়ে। ট্রেইন নরমালি ১০ টার সময় প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায়। ঠিক সময়ে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছালাম। তবে মেইল ট্রেইন প্রায়শই দেরী করে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছায়। আসন সংখ্যা থেকে যাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং টিকিটে নির্ধারিত আসন না থাকায় সিট এ বসতে মোটামুটি ছোটখাটো একটা যুদ্ধ জয় করতে হয়।
এরপর যুদ্ধ জয় করে ট্রেনে আসন পেলাম। বাইরে সেদিন দুধ জোৎস্না ছিল। আর মনে ছিল ওর সাথে দেখা করার দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষা। তাই পুরো রাত্রি খুব অস্থিরতায় কাটলো। যাইহোক সকাল ৮ টার মধ্যে ট্রেইন আমাকে সীতাকুণ্ড স্টেশনে পৌঁছে দিল। স্টেশনের পাশেই ওয়াশরুম থেকে ২০ টাকা দিয়ে ভালোমতো ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
এরপর ২-৩ মিনিট হেঁটে সীতাকুণ্ড বাজার থেকে নাস্তা করে নিলাম। নাস্তা শেষে সিএনজি ভাড়া করে রওনা হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে প্রকৃতিকন্যার সাথে আমার দেখা হলো। আমি তাকে ভালোবেসে বুকে আলিঙ্গন করে নিলাম। তারপর শুরু হলো আমাদের হিল ট্র্যাকিং।
ঘুরাঘুরি শেষে বিকালে সিএনজি ভাড়া নিয়ে চলে আসলাম গুলিয়াখালী সী বিচ এ। এইখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রকৃতিকন্যার সাথে থাকলাম। বিকেলের মনোরম পরিবেশ টা অসাধারণ সুন্দর। ঘাসের উপর শুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে প্রকৃতিকন্যাকে গেয়ে শুনালাম, "ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো"।
সেদিন রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে কক্সবাজার এর বাস এ উঠে পড়লাম আমরা। এরপর ভোর ৪ টার দিকে কক্সবাজার কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নামলাম। সেখান থেকে ১০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে চলে আসলাম সুগন্ধা বিচ এ। সুগন্ধা বিচে এসে আমার প্রকৃতিকন্যার সাথে ২-৩ ঘন্টা ঘুরাঘুরি করলাম। ভোরের দিকে বিচ টা দেখতে অন্যরকম সুন্দর। কেননা এসময় জোয়ার চলতে থাকে।
এরপর সেখান থেকে ইনানি বিচে। উদ্দেশ্য জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যাবো। জাহাজের সবুজ গালিচায় বসে সমুদ্র দেখতে দেখতে মোটামুটি ৪ ঘন্টার মধ্যে সেইন্ট মার্টিন জেটি ঘাটে পৌঁছে গেলাম। এসময় সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে গাঙচিলেরা যেন সেখানে আমাদের দুজনকে স্বাগতম জানালো। এরপর একটি হোটেলে উঠলাম। তারপর রাতে আবার প্রকৃতিকন্যার সাথে বিচে হাঁটতে বের হলাম।
পরেরদিন খুব সকালে উঠে গেলাম ছেঁড়া দ্বীপ এর উদ্দেশ্য। ছেড়াদ্বীপ ঘুরে আসতে মোটামুটি ৪ ঘন্টার মতো লাগলো। এসেই যখন পড়েছি হুমায়ুন আহমেদ এর বাংলো টাও একটু দেখে আসতে পারি। তাই গেলাম সেখানে। বিকেলে প্রকৃতিকন্যা বায়না ধরলো সন্ধ্যা অব্দি সমুদ্রের পাড় দিয়ে তার সাথে হাঁটতে হবে, একসাথে সূর্যাস্ত দেখব দুজন। আমরা একসাথে সন্ধ্যা অব্দি হাঁটলাম। এবং রুচি ডালমুট খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখলাম।
অনেকেই সেইন্ট মার্টিন এর মিষ্টি তেঁতুল, শ্যূঁটকি, বাদাম সহ মেয়েদের বিভিন্ন অর্নামেন্টস কিনে থাকে। আমিও কিনলাম। এরপর রাতের খাবারে প্রকৃতিকন্যার সাথে সামুদ্রিক মাছের বার্বিকিউ ট্রাই করলাম। কাঁকড়া ফ্রাই ব্যক্তিগতভাবে আমার ফেবারিট। প্রকৃতিকন্যা তাই নিজ হাতে আমাকে কাঁকড়া ফ্রাই খাওয়ালো।
প্রকৃতিকন্যার আরেকটি বায়না ছিল সূর্যদয় দেখা। এজন্য খুব সকালে বিচ এ চলে এলাম দুজন। ভোরের রাঙা সূর্যের আবহে বেশ কিছু এ্যায়েস্থেটিক ছবি তুলে নিলাম। সেদিনও খুব সুন্দর কাটলো। এরপর রাতে জাহাজে করে আবার আমরা ফিরে আসলাম।
এরপর মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেল। প্রকৃতিকন্যাকে তার পাহাড়ি বাসায় রেখে আসতে গেলাম। হঠাৎ দেখি ওর চোখ ভেজা। আমারও চোখ ভিজে উঠলো বিদয় নিতে। আমি বললাম তুমি কেঁদো না প্রকৃতিকন্যা। আমি প্রতি বছর তোমাকে দেখতে ঠিক ছুটে আসবো, কথা দিলাম। কথা দিলাম আমি সারাজীবন তোমায় ভালোবাসবো। এরপর প্রকৃতিকন্যার সাথে কাটানো সকল সুন্দর স্মৃতি বুকে নিয়ে বাসের ট্রেনের সিটে বসে রুচি ডালমুট খেতে খেতে আবার ঢাকায় ফিরে এলাম।
সমাপ্ত
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0মন্তব্যসমূহ