বিশ্ব আত্মরক্ষা প্রতিরোধ দিবস: মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও বন্যা পরবর্তী মানসিক বিপর্যয় প্রতিরোধে করণীয়

লিপির আলো
By -
0

 

বিশ্ব আত্মরক্ষা প্রতিরোধ দিবস: মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও বন্যা পরবর্তী মানসিক বিপর্যয় মোকাবিলায় করণীয়

প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব আত্মরক্ষা প্রতিরোধ দিবস। যার মূল লক্ষ্য আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা চালানো।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী , প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে, এবং আরও অনেক মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আত্মহত্যার পেছনে জটিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক এবং মানসিক কারণ হতাশা, মানসিক চাপ, অসহায়ত্ব এবং একাকীত্ব প্রবলভাবে  প্রভাব বিস্তার করে ।

আত্মহত্যার কারণ ও সামাজিক প্রভাব

আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

মানসিক সমস্যা: যেমন বিষণ্ণতা, উদ্বেগজনিত সমস্যা, ব্যক্তিত্বের অসামঞ্জস্যতা, এবং মানসিক আঘাত।

সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা: পারিবারিক বিচ্ছেদ, সম্পর্কের সমস্যা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, এবং হেনস্তা।

অর্থনৈতিক সংকট: চাকরির অনিশ্চয়তা, আর্থিক দৈন্যতা, এবং ঋণের বোঝা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, ভূমিকম্প, এবং সাইক্লোনের মতো দুর্যোগের পর মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে যায়।

বন্যা পরবর্তী মানসিক বিপর্যয়: একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ

বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের মানসিক অবস্থার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। সম্পদ হারানো, জীবনযাত্রার অনিশ্চয়তা, এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে মানুষ গভীর হতাশায় ভুগতে শুরু করে। এই ধরনের দুর্যোগের পর মানুষ অবসাদ, উদ্বেগ, এবং মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হন। এক্ষেত্রে, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি, এন্টি সুইসাইডাল স্কোয়াড কর্তৃক আয়োজিত একটি বিশেষ টকশোতে বন্যা পরবর্তী মানসিক বিপর্যয় এবং কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। টকশোতে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মানুষ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবে গভীরভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যারা তাদের প্রিয়জন এবং জীবিকা হারিয়েছে, তাদের মানসিক পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার করণীয়

বন্যা পরবর্তী মানসিক বিপর্যয় থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি:

1.মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রাপ্তি সহজ করা: বন্যাপ্রবণ এলাকায় মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা এবং দুর্গতদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রাপ্তি সহজতর করা উচিত। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

2.মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি: টিভি, রেডিও, সামাজিক মাধ্যম এবং অন্যান্য প্রচারমাধ্যমের সাহায্যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

3.কমিউনিটির সক্রিয় ভূমিকা: সমাজের সকল স্তরের মানুষদের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করা খুবই জরুরি।

4.কাউন্সেলিং ও সহায়তা কেন্দ্র: স্থানীয় পর্যায়ে মানসিক কাউন্সেলিং কেন্দ্র চালু করা, যেখানে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গিয়ে তাদের মানসিক অবস্থা শেয়ার করতে পারবেন।

সমাজ ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর প্রশাসনের দায়িত্ব শুধু পুনর্গঠন বা ত্রাণ দেওয়া নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের পাশাপাশি মানসিক পুনর্বাসনের জন্যও বাজেট বরাদ্দ থাকা উচিত। তাছাড়া, স্থানীয় প্রশাসনকে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

পরিশেষে আত্মহত্যা প্রতিরোধের দায়িত্ব কেবল ব্যক্তির নয়, এটি পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। আমাদের দায়িত্ব, এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে মানসিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা সহজ হয়, এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া যায়।

 

মুশফিকুর রহমান

শিক্ষার্থী, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় 


Tags:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)