ইদ মানে আনন্দ, ইদ মানে খুশি। মুসলমানদের জন্য বছর ঘুরে ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহা মুসলমানদের জীবনে নিয়ে আসে খুশির বার্তা। ইদ আসলেই চারদিকে বিরাজ করে উৎসবের আবহ। ইদ উৎসবের এই ধারা চলে আসছে সুপ্রাচীন কাল থেকে। সময়ের প্ররিক্রমায় পরিবর্তন হয়েছে ইদের আনন্দের ধারা, আনন্দের ধরন। বদলে গেছে চিরাচরিত প্রাচীন রীতিনীতি গুলো।
সময়ের পরিক্রমায় প্রথমে যেটি হারিয়েছে তা হলো ইদ কার্ড। আগে ইদের সময় একে অপরকে ইদ কার্ড দেয়ার চল ছিল। ছোট বড় বিভিন্ন প্রকার কার্ডে শুভেচ্ছা চিরকুট লিখে একে অপরকে আদান প্রদানের চল ছিল। ছোট বাচ্চারা আবার টিফিনের টাকা জমিয়ে পাড়ার মোড় থেকে ৫/১০ টাকার কার্ড কিনতো। তা আবার বিলি করতো বন্ধু বান্ধবদের কাছে। এসব কার্ডে থাকতো ডরিমন, টম জেরি, বেন টেন সহ তখনকার সময়কার জনপ্রিয় কার্টুন ক্যারেক্টার সমূহ।
কিন্তু এখন এ কাগজের কার্ডের জায়গা দখল করে নিয়েছে ডিজিটাল ফটো কার্ড। এখন বিভিন্ন ডিজাইনিং সফটওয়ার দিয়ে বানানো ডিজিটাল কার্ডের চলই বেশি। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক হারে শেয়ার হয় এসব ডিজিটাল কার্ড গুলো। ডিজিটাল এই দুনিয়ায় হারিয়ে গেছে আগের দিনের মেসেজিং শুভেচ্ছার ট্রেন্ড গুলো। আগে বাটন ফোন গুলো দিয়ে বড় বড় মেসেজ পাঠানো হতো এবং তা ছিল সাপের মতো আকানো বাঁকানো। নব্বই দশকের ছেলে মেয়েদের মধ্যে এ মেসেজের চল ছিল বেশি।
আগের দিনে কেউ ইদের ড্রেস কিনলে তা লুকিয়ে রাখতো, এই ভেবে যে এই ড্রেস কেউ দেখলে পুরনো হয়ে যাবে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা তাদের ইদের ড্রেস কাউকে দেখাতো না, দেখালে সেও তার মতো ড্রেস কিনে ফেলবে এই ভেবে। কিন্তু এই ধারা এখন একটু করে পরিবর্তন হচ্ছে। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে কেউ ইদের মার্কেট করলে সাথে সাথে ফেসবুকে ডে বা স্নেপ শেয়ার করছে। কে কত ভালো ব্র্যান্ড থেকে কিনছে তা দেখাচ্ছে মানুষকে। অনেকটা শো অফের মতো হয়ে গেছে বিষয় গুলো।
আগে চাঁদ রাতে ইফতারের শরবত খেয়েই সবাই বাসার ছাদে বা খোলা কোনো জায়গায় দৌঁড় দিত চাঁদ দেখবে বলে। চাঁদ দেখতে পারার মূহুর্তের খুশি কেউ বলে বুঝাতে পারবে না। চাঁদ দেখতে পারার সাথে সাথে চারদিকে ইদের আমেজ শুরু হয়ে যেত। এই ধারা এখনও ছোট হারে চলমান আছে।
চাঁদ দেখতে পারার সাথে শুরু হয়ে যেত মেহেদী অভিযান। পাড়ার কার বাসায় মেহেদী গাছ আছে তা খুঁজে, সবাই মিলে মেহেদী তুলে, শীল পাটায় বেটে তা হাতে লাগানো হতো। বাডির সব মেয়ে মানুষ এক হয়ে খোশ গল্পের মাধ্যমে একে অন্যকে মেহেদী দিয়ে দিত। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বাজারে এসেছে টিউব মেহেদীর যুগ। এখন টিউব মেহেদী দিয়ে বাহারী রকমের ডিজাইন করে মেহেদী পড়া হয়। আবার মেহেদী পড়া হাতের ছবি শেয়ার করা হয় সোস্যাল মিডিয়ায়। এ এক অন্য ধরনের খুশি।
ইদের দিনের অন্যতম অনুসঙ্গ ইদ সালামি। ছোটরা ইদের সকাল থেকেই বড়দের পিছে ছুটে চলে সালামী সংগ্রহে। বড়রাও এদিন খুশি মনে ছোটদের হাতে ধরিয়ে দেন বিভিন্ন টাকার নতুন চকচকা নোট। কিন্তু এখন সালামীর এ রীতিও হয়ে গেছে ডিজিটাল। এখন ঘরে বসেও দূর দূরান্তের আত্মীয় স্বজন দের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আদান প্রদান হচ্ছে সালামী। অনেকে এসব মাধ্যমে মজা করে এক দুই টাকাও পাঠাচ্ছেন। আবার দিচ্ছেন হাজার টাকার দামী সালামীও।
তানজিল ফুয়াদ
সহ সম্পাদক, লিপির আলো
লিপির আলোর সকল নিউজ ব্লগ পড়তে গুগল নিউজ ফলো করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0মন্তব্যসমূহ