গত এক দশকে প্রোটিনের উৎস হিসেবে কুমড়োর বীজের জনপ্রিয়তা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। পেপিটাস নামে পরিচিত এই ভোজ্য বীজ মিষ্টি কুমড়োতে পাওয়া যায়। চ্যাপ্টা ও ডিম্বাকৃতির এই বীজ মূলত সাদা ও সবুজ রঙের হয়। কুমড়োর বীজের বাইরের অংশ অনেকটা শক্ত, সাদা খোলসের মত হয় যেটা খাওয়ার পূর্বে ফেলে দেওয়া হয়।
কুমড়োর বীজ তার উন্নত পুষ্টিগুণ ও সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য অনেক শতাব্দী ধরেই খাওয়া হয়। কুমড়োর বীজে রয়েছে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি (ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সহ), ফাইবার, ভিটামিন (যেমন ভিটামিন ই), এবং খনিজ (যেমন ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক এবং আয়রন) এর মতো পুষ্টি। এই বীজ কাঁচা ও রোস্টেড দুইভাবেই খাওয়া যায়। এর পাশাপাশি সালাদ, স্যুপ, গ্র্যানোলা বার ও বেক করা খাবার এর সাথেও খাওয়া যায়।
কুমড়ো বীজের উপকারিতা
১। পুষ্টি উপকারিতা: কুমড়োর বীজে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, লৌহ, প্রোটিন, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের মতো পুষ্টি উপাদান। এর পাশাপাশি ভিটামিন ই ও ক্যারোটিনোয়িডস এর মত এন্টিঅক্সিডেন্টস আছে।
২। হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য: কুমড়োর বীজে যে ম্যাগনেসিয়াম ও এন্টিঅক্সিডেন্টস আছে তা রক্তচাপ কমাতে ও হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। হৃদপিণ্ডের রোগের ঝুঁকি কমাতে কুমড়োর বীজে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩। প্রোস্টেট স্বাস্থ্য: কুমড়োর বীজে যে জিংক আছে তা প্রোস্টেট স্বাস্থ্য ভালো রাখে। প্রোস্টেট স্বাস্থ্য বলতে প্রোস্টেট গ্রন্থির কার্যাবলি এবং কার্যকারিতা এই সংক্রান্ত স্বাস্থ্যকে বোঝায়। বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লেসিয়া (BPH) নামক রোগের ঝুঁকি কমাতে কুমড়োর বীজ সহায়তা করে।
৪। সুখনিদ্রা: কুমড়োর বীজ ট্রিপটোফিন নামক অ্যামোনিক এসিডের ভালো উৎস যা সেরিটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ করে। সেরিটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোন ভালো ঘুম আসতে সাহায্য করে।
৫। ইমিউনিটি বৃদ্ধি: কুমড়োর বীজে থাকা জিংক, ভিটামিন ই, লৌহ ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে।
কুমড়োর বীজের অপকারিতা
১। অ্যালার্জি: কিছু ব্যক্তির কুমড়োর বীজ থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হালকা চুলকানি এবং ফোলা থেকে শুরু করে আরও গুরুতর লক্ষণ যেমন শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। আপনি যদি কুমড়োর বীজ খাওয়ার পরে কোনো প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তাহলে চিকিৎসকের কাছ থেকে দ্রুত সহায়তা নিন।
২। উচ্চ ক্যালোরি এবং চর্বি সামগ্রী: যদিও কুমড়োর বীজের চর্বিগুলি বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর অসম্পৃক্ত চর্বি, তবুও তারা ক্যালোরিসমৃদ্ধ। তাই ক্যালোরির পরিমাণ হিসাব না করে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে কুমড়োর বীজ খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে পারে।
৩। ওষুধের সাথে সম্ভাব্য মিথস্ক্রিয়া: কুমড়োর বীজে ফাইটোস্টেরল নামক যৌগ থাকে, যা কিছু ওষুধের শোষণে হস্তক্ষেপ করতে পারে, যেমন কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী ওষুধ। আপনি যদি ওষুধ গ্রহণ করেন, বিশেষ করে নিয়মিতভাবে, আপনার খাদ্যে কুমড়োর বীজ যোগ করার আগে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা একটি ভাল ধারণা।
কীভাবে কুমড়ো বীজ খাওয়া যায়?
কুমড়ো বীজকে ওটস, স্মুদি, চিয়া পুডিং, সালাদ, স্যুপ, গ্র্যানোলা বার, মাফিন কেক অথবা শস্য সমৃদ্ধ খাদ্যের সাথে গ্রহণ করা যায়। এটিকে কাঁচা অথবা রোস্টেড অবস্থায়ও খাওয়া যায়। ১৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৭৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর কম তাপমাত্রায় তেল বা লবণ ছাড়া হালকা ভেজে খেলে সবচেয়ে ভালো। সহজে হজম হওয়ার জন্য খোসা ছাড়িয়ে খাওয়াই ভালো।
কতটুকু কুমড়ো বীজ খাওয়া যায়?
কুমড়ো বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। প্রতিদিন প্রায় ১২ গ্রাম পর্যন্ত কুমড়ো বীজ খাওয়া যায়। এর চেয়ে বেশি খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
সুতরাং, কুমড়ো বীজ সাস্থ্যকর ডায়েট পরিচালনার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী খাবার। কিন্তু এই ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিমাণমত খেতে হবে আর প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখকঃ ক্যারোলিন গমেজ
সহ-সম্পাদক লিপির আলো
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0মন্তব্যসমূহ