স্বপ্ন যাবে বাড়ি। গত কয়েক বছর ধরে ইদ আসলেই বহুল প্রচলিত কথা এটি। বিশেষ করে নিজ বাড়ি, পরিবার, আপনজন ছেড়ে যারা জীবিকার তাগিদে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে থাকেন তাদের কাছে এটি একটি স্বপ্নই।
ঢাকা একটি জনবহুল অঞ্চল হলেও এর বেশিরভাগ মানুষের মূল ঠিকানা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত। এরা জীবিকা ও লেখাপড়ার তাগিদে ঢাকায় বাস করছে। সারা বছর এদের বাড়ির মানুষের মুখ খুব একটা দেখা হয় না। পরিবারের সাথে কাটাতে পারেন না নিজেদের সুখ দুঃখের সময় গুলো। কিন্তু ঈদ আসলেই এরা উম্মুখ হয়ে উঠে বাড়ি যাওয়ার জন্য। ঈদের এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে আসেন নিজের শিকড়ের দিকে।
সারা বছর সুযোগ না পেলেও ঈদের সময় ঠিকই ছুটে যান নিজের বাড়ির পানে। মা, বাবা, ভাই, বোন মিলে মেতে উঠেন উৎসবে। ট্রেন, বাস, লঞ্চ, বিমান যে যেভাবে পারেন ছুটে যান শিকড়ের দিকে।
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে প্রায় এক মাস আগে থেকেই চলে তোড়জোড়। ট্রেন ও বাসের অগ্রীম টিকেট কাটতে নেমে পড়তে হয় যুদ্ধে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সাধারনত যাত্রার দশ দিন আগে টিকেট ছাড়ে। এ টিকেট ক্রয়ের জন্য আগের দিন সন্ধ্যা থেকে মানুষ দাঁড়িয়ে যায় বিশাল লাইনে। প্রায় ৮-১০ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করেন টিকেট নামক সোনার হরিন টি। আবার অনেকে টিকেট না পেয়ে ফিরে যান শূন্য হাতে। বাসের ক্ষেত্রেও একই দৃশ্যের অবতারনা হয়। এত কষ্ট সব বিলিন হয়ে যায় বাড়ি গিয়ে প্রিয়জনের মুখটি দেখে। অনেক দিন পর পরিবারের সবাইকে পেয়ে তৈরি হয় আবেগঘন পরিবেশের।
প্রতিবছর কম বেশি এক কোটি মানুষ এই ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকা ছাড়ে। গণপরিবহনে সড়কপথে ছয় থেকে ১০ লাখ, নৌপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, রেলপথে দেড় লাখ যাত্রী অভারলোড হয়ে যাতায়াত করতে পারে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ শুধু একটু প্রিয়জনের সাথে উৎসব ভাগাভাগি করে নিতেই এত কষ্ট সহ্য করে বাড়ির পানে ছুটে চলেন।
উৎসবে এমনভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষের ছুটে চলা মনে করিয়ে দেয় জীবিকার জন্য আমরা যেখানেই থাকিনা কেন, আমাদের শিকড় আমরা ভুলি নাই। সুযোগ পেলেই শুরু হয় শিকড়ের পানে ছুটে চলার অভিযান। উৎসব পাগল বাঙ্গালীর উৎসব যে শুধু আত্মকেন্দ্রিক না বরং দৃঢ় পারিবারিক বন্ধনে বিশ্বাসী তা ফুটে উঠে এসব দৃশ্যে। পারিবারিক সব বিরোধ ভুলে সবাই ছুটে চলে স্বপ্নের পানে। স্বপ্ন নিয়ে যায় বাড়ি।
তানজিল ফুয়াদ
সহসম্পাদক, লিপির আলো
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0মন্তব্যসমূহ