বসন্তের রঙে রাঙাতে আসছে ভালোবাসা দিবস। জানুন ভ্যালেনটাইনস এর আসল ইতিহাস

লিপির আলো
By -
0

 

the-true-history-of-Valentines-lipir-alo

ভালোবাসা তোমায় জানাই ফাল্গুনের শিশির ভেজা কৃঞ্চচূড়ার শুভেচ্ছা। আবারও এসেছে ফাগুন, এসেছে বসন্ত। তারই সাথে বসন্তের রঙে রাঙিয়ে এসেছে ভালোবাসা দিবস। 


বসন্তের ছোঁয়ায় মেতেছে প্রাণ। শীতের শুষ্কতা মুছে দখিন হাওয়ায় ভর করে এসেছে বসন্ত। প্রকৃতি তাই উদ্বেলিত নবযৌবনের নবরূপ পাওয়ার আশায়। তারই সাথে তারুণ্যে লেগেছে প্রেমের দোলা। তবে আপনি কি জানেন ঠিক কবে কিভাবে শুরু হয়েছিল ভ্যালেনটাইস ডে। কেনই বা সারা বিশ্বে প্রতিবছর পালিত হয় ভ্যালেনটাইস ডে। সেই ইতিহাসই আজকে জানাব আপনাদেরকে। 


ভালোবাসা দিবসের ইতিহাসের দিকে তাকাতে গেলে আমরা বিভিন্ন দ্বিমত দেখেতে পাই। প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি নারী ও প্রেমের দেবীর সম্মানে ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। কারো কারো মতে এটিকে ভালোবাসা দিবস বলার কারণ ছিল।

 

আবার কেউ বলেছেন, ২০০ খ্রিস্টাব্দে রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস দেশে বিয়ে প্রথাকে নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা করে দেন- "আজ থেকে কোনো যুবক বিয়ে করতে পারবে না। যুবকদের জন্য শুধুই যুদ্ধ।" কেননা যুবকরা বিয়ে করলে যুদ্ধের প্রতি অনীহা চলে আসে। তার মতে যুবকরা যদি বিয়ে করে তবে যুদ্ধ করবে কারা?

 

সম্রাটের এমন  অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন ভ্যালেন্টাইন নামের এক প্রেমিক যুবক। অসীম সাহসী এই যুবকের প্রতিবাদে ক্ষেপে উঠেছিলেন স্বয়ং সম্রাট। রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মাথা কেটে ফেলে তার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই এ দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

 

আবার প্রাচীনকালে বিশ্বাস করা হতো ১৪ ফেব্রুয়ারি পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা তাদের জীবন সাথীকে এদিনে বিয়ে করত। বসন্ত ঋতুটি যেন ছিল তাদের বিয়ের ও ভালোবাসার ঋতু। তাই ভালোবাসার এমন নিদর্শনকে পরবর্তীকালে ভালোবাসা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।


আবার অনেকে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামের একজন চিকিৎসক ছিলেন যিনি ভালোবেসে রোগীর সেবা করতেন এবং তেতো ওষুধের সাথে মধু ও দুধ মিশিয়ে রোগীদের খাওয়াতেন। একদিন রোমের এক কারাপ্রধান চিকিৎসার জন্য তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন।  


ভ্যালেন্টাইন তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করে মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য। মেয়েটির চিকিৎসা চলাকালীন হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা এসে ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়। কেননা ডাক্তার ছিল খ্রিস্টান ধর্মের। সেই সময় এটি ছিল একটি অপরাধ। 


যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ভ্যালেন্টাইনের বুঝতে বাকি ছিল না খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল— ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন।


ভ্যালেন্টাইনের হত্যার পর কারাপ্রধান চিরকুটটি  মেয়েটিকে দিয়েছিলেন। মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল; কারণ ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দুই চোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে বা কারও মতে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ভালোবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকেই দিনটিকে মানুষেরা ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে।


তবে আজ থেকে কয়েক বছর আগেও দিবসটি এত জনপ্রিয় ছিল না। দিবসটি কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য সভ্যতার অংশ হিসেবে উদযাপন করা হতো; কিন্তু বর্তমানে দিনটি যেন পুরো বিশ্বে ভালোবাসা প্রকাশের একটি অন্যতম মধ্যমে পরিণত হয়েছে। 


the-true-history-of-Valentines-lipir-alo


বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব উদযাপিত হয় পহেলা ফাল্গুনে। ভালোবাসার লাল রঙে রঙিন হয়ে ওঠে প্রকৃতি।  চারিদিকে ফুল আর কোকিলের মধুর কন্ঠে গান যেন প্রকৃতিকে নতুন রূপে রাঙিয়ে তোলে। 


প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্য যেন মানুষকে নতুন করে ভালোবাসতে শেখায়। চারেদিক থেকে বসন্তের গান ভেসে আসে "বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিলো নেশা, কে যেন ডাকিছে পিছে বসন্ত এসে গেছে"। এ বাতাসে যেন প্রেমের গন্ধ ভাসতে থাকে। রমণীরা লাল বা বাসন্তী শাড়ি আর মাথায় তাজা ফুল পরে বর্ণিল আয়োজনে বরণ করে নেয় বসন্তকে। 


মহাসমারোহে ভালোবাসার উৎসব পালন করা হলেও বিভিন্ন দেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে'কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইনস উৎসব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কেননা পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য করে দেখা হয়। তাই গির্জার অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা বিরত থাকে না। খ্রিস্টীয় চেতনা ভ্যালেন্টাইন দিবসের কারণে বিনষ্ট হওয়ার কারণেই ফ্রান্সে ভ্যালেন্টাইনস ডে'কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইংল্যান্ডের ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও প্রশাসনিক নিষিদ্ধ করেছিল  ভ্যালেন্টাইন ডে। এছাড়াও অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবসটি জনগণ ও সরকারিভাবে প্রত্যাখ্যাত করেছে। 


২০০৯ সাল থেকে ইরানে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুল, কার্ড, চকলেট ইত্যাদি দেওয়াকে নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামী বিধানের পরিপন্থী হওয়ার ইন্দোনেশিয়াতেও ভ্যালেন্টাইন ডে পালন নিষিদ্ধ। সর্বশেষ পাকিস্তানে এ দিনটি উদযাপন নিষিদ্ধ করেছে। 

 

তবে বর্তমানে ভ্যালেনটাইন আর বসন্ত উৎসব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বাসন্তী আর লাল রঙে কেবল প্রকৃতিই নয় রঙিন হয়ে ওঠে প্রত্যেকটি মানুষের মন। বর্তমানে  ভালোবাসা দিবস কেবল প্রেমিক প্রেমিকারা পালন করে এমন নয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষ উদযাপন করে ভালোবাসার এ উৎসব।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)