আধুনিক সভ্যতার পথিকৃৎ হিসাবে প্রায় পুরোটা কৃতিত্ব দেওয়া যায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নাই, যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অর্ন্তর্ভুক্তি নেই। পৃথিবী ক্রমাগত আরো বেশি আধুনিক অর্থাৎ ডিজিটাল হচ্ছে। মানুষ এবং মানবসভ্যতা নির্ভর হয়ে পড়ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর। অনলাইন ভিত্তিক কাজের চাহিদা যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনই প্রায় প্রত্যেকটি দেশের সরকার অনলাইনে পেমেন্ট সিস্টেম ও চালু করেছে। মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনে শপিং করছে এবং ঘরে বসেই সেটার পেমেন্ট ও করছে। আর এই অনলাইনে পেমেন্ট করার সবচাইতে বড় ও সহজ মাধ্যম হলো এটিএম কার্ড।
এটিএম কার্ডের আবিষ্কার
স্কটল্যান্ডের অধিবাসী জন শেফার্ড ব্যারনের মাথায় সর্বপ্রথম এটিএম মেশিন আবিষ্কারের ধারণা আসে। চকোলেট ভেন্ডিং মেশিন অর্থাৎ চকোলেট বিক্রি করার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র থেকেই তিনি এটিএম তৈরি করার আইডিয়া ও উৎসাহ পান। ১৯৬৭ সালের২৭ জুন লন্ডনে বার্কলেস নামের একটি ব্যাংকের এনফিল্ড শাখায় সর্বপ্রথম এটিএম বুথ মেশিন স্থাপন করা হয়। মেশিনটি PIN (Personal Identification Number) এর ভিত্তিতে কাজ করতো।
এটিএম কার্ড আসলে কি!
এটিএম কার্ড হলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত একটি ভার্চুয়াল কার্ড। এটি সাধারণত প্লাস্টিকের হয়ে থাকে। এটিএম কার্ডের সাহায্যে অনলাইনে শপিং, মানি ট্রান্সফার, এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা, টাকা জমা করা সহ আরো বেশকিছু কাজ করা যায়। ব্যাংক একাউন্ট করতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাকে এটিএম কার্ড অফার করবে। কার্ড নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে। কিছুদিন পর আপনি কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন। এটিএম কার্ড এবং এটিএম বুথ এর মাঝে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। অনেকেই এই দুটো কে একই জিনিস মনে করে। কিন্তু এই দুটো জিনিস এক না। কেননা এটিএম কার্ড খুবই ছোট, বহনযোগ্য, এমনকি পকেটে নিয়েও ঘুরে বেড়ানো যায়। কিন্তু আমরা যে এটিএম বুথ গুলো দেখতে পাই সেই বুথ গুলোতে এটিএম মেশিন থাকে যাতে এটিম কার্ড প্রবেশ করিয়ে টাকা উত্তোলন বা জমা করা যায়।
ATM কার্ডের পূর্ণরুপ কি!
ATM কার্ডের পূর্ণরুপ Automated Teller Machine, অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় গণনাকারী যন্ত্র। এই মেশিনের মাধ্যমে সরাসরি টাকা উত্তোলন করা যায় এবং সরাসরি ব্যাংকের সাথে যুক্ত থাকে। যার ফলে ঝুঁকিমুক্ত ভাবে টাকা উত্তোলনে আস্থার জায়গা এটিএম কার্ড।
এটিএম কার্ডের প্রকারভেদ
কাজের ভিত্তিতেই কেবল এটিএম কার্ডের প্রকারভেদ করা যায়। অর্থাৎ একেকটি কাজ একেক রকম কাজে ব্যবহার করা হয়। এটিএম কার্ড দুই প্রকার। ১) ক্রেডিট কার্ড, ২) ডেবিট কার্ড
আমরা এই দুই ধরনের কার্ড এর নাম শুনে থাকলেও এগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জানি না। ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ড সম্পর্কে একটু জেনে আসা যাক।
১) ক্রেডিট কার্ড: ক্রেডিট কার্ড হলো সেই কার্ড যার মাধ্যমে আপনি আপনার জমাকৃত টাকা থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ লেনদেন করতে পারবেন। যেমন ধরা যাক আপনার ব্যাংক একাউন্টে ২০ হাজার টাকা জমা আছে। কিন্তু আপনি কেনাকাটা করতে গিয়ে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ করে ফেলেছেন। এমন মুহূর্তে আপনি কি করবেন, যেখানে কেনাকাটায় আপনার এটিএম কার্ড এর মাধ্যমে পেমেন্ট করার কথা। এমতাবস্থায় আপনি চাইলে খরচকৃত অতিরিক্ত টাকা বা তার চেয়েও বেশি টাকা ব্যাংক থেকে ধার নিতে পারবেন। তো যেই কার্ডের মাধ্যমে আপনি এই সুযোগ নিতে পারবেন এই ধরনের কার্ড ই মুলত ক্রেডিট কার্ড।
২) ডেবিট কার্ড: যে কার্ডের মাধ্যমে শুধুমাত্র জমাকৃত টাকাই খরচ করা যায়, অতিরিক্ত টাকা ধার বা খরচ করার সুযোগ নেই সেই কার্ড গুলোই মুলত ডেবিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ড এ অতিরিক্ত টাকা ধার বা খরচ করার সুযোগ থাকলেও ডেবিট কার্ডে আপনি এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। আপনার চাহিদার উপর ভিত্তি করে আপনি যেকোনো ধরনের কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এটিএম কার্ড এর কাজ কি!
ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে টাকা লেনদেন এর জন্য এটিএম কার্ডে এমন প্রযুক্তি সংযুক্ত করা আছে যা শুধুমাত্র কার্ড ব্যবহার করার মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে। এর জন্য আলাদা ভাবে ফিজিক্যালী ব্যাংকে গিয়ে লাইন ধরতে হয় না। এটিএম কার্ডের মাধ্যমে যেসব সুবিধা ভোগ করা যায় তার একটি হলো পকেটে টাকা রেখে রিস্ক নিয়ে ঘুরতে হয় না। কেননা সমস্ত টাকা আপনি এটিএম কার্ডেই জমা রাখতে পারবেন। টাকা প্রয়োজন হলে যেকোনো সময় এটিএম কার্ড থেকে টাকা উত্তোলন সম্ভব। এটিএম কার্ডে কেবলমাত্র টাকা থাকলেই নিকটবর্তী যেকোনো এটিএম বুথে গিয়ে কার্ড ইস্যু করিয়ে ইচ্ছা অনুযায়ী প্রয়োজনমতো টাকা উইথড্র করা যায়।
এটিএম কার্ড পেতে করণীয়
এটিএম কার্ড সম্পর্কে আমরা সামান্য জেনে থাকলেও আমরা অনেকেই জানি না এটা পেতে করণীয় কি! তাহলে এই সম্পর্কে একটু জেনে আসা যাক। সবার আগে আপনাকে একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে। এবং বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকেই এটিএম কার্ড প্রদান করে থাকে। আপনি যে ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চান, সেখান থেকেই আপনাকে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটিএম কার্ড পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হবে। নির্দিষ্ট ব্যাংক থেকে এরপর আপনাকে এটিএম কার্ড প্রদান করলে আপনি এই কার্ড দিয়ে ঐ ব্যাংক এর যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উইথড্র করতে পারবেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আপনার ব্যাংক একাউন্ট এবং এটিএম কার্ড যুক্ত করতে পারবেন।
এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তোলার নিয়ম
নির্দিষ্ট ব্যাংক থেকে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকা তোলার জন্য বেশকিছু নিয়ম আছে। এটিএম কার্ড পাওয়ার পর অবশ্যই আপনাকে এই নিয়মগুলো মেনে টাকা উত্তোলন করতে হবে। অন্যথায় নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আপনাকে যখন এটিএম কার্ড প্রদান করা হবে তখন আপনাকে পিন ভেরিফাইড কোড দেওয়া হবে যা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয়। কেননা এই পিন এর মাধ্যমেই আপনি যে এটিএম কার্ডের স্বত্বাধিকারী সেটা প্রমাণ করবে। এর মানে দাড়ালো আপনার কার্ড যদি হারিয়েও যায়, এবং অন্য কেউ সেই কার্ড দিয়ে টাকা তুলতে পারবে না, যদি না আপনার পিন নাম্বার সে জানে। কাজেই পিন নাম্বার কতটা গুরুত্বপূর্ণ বোঝাই যাচ্ছে।
তবে এটিএম কার্ড যদি ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার কার্ড ব্লক করে দিতে পারে। এইজন্য এটিএম কার্ডের ব্যবহার জানা একান্ত জরুরি। সবার প্রথমে টাকা উত্তোলনের জন্য আপনাকে এটিএম বুথে যেতে হবে। তারপর এটিএম বুথ এর ডিসপ্লে তে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কার্ড ইস্যু করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। তারপর যথাযথ নিয়মে এটিএম বুথে কার্ড প্লেস করাতে হবে। তারপর বুথে আপনাকে আপনার গোপন পিন নাম্বার দিতে বলবে। আপনার পিন দেওয়ার সাথে সাথেই আপনি যত টাকা উইথড্র দিবেন, তা পেয়ে যাবেন।
এটিএম কার্ডের পিন ভুলে গেলে করণীয়
আমরা অনেক সময় যেকোনো কিছুর পাসওয়ার্ড ভুলে যাই। আর এই ভুলে যাওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু অনেক সময় যে কেউ এটিএম কার্ডের পিন ভুলে যেতে পারে। অনেকেই এক্ষেত্রে ঘাবড়ে যায়। যেহেতু টাকা পয়সার সাথে সম্পর্কিত এই কার্ড। তবে ভুলে যাওয়া যদি একটা সমস্যা হয়, অবশ্যই তার সমাধান আছে।৷ দারুণ বিষয়ে হলো এটিএম কার্ডের পিন ভুলে গেলে খুব সহজেই দুটি উপায়ে আপনি তা আবার ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন।
প্রথমত হেল্পলাইনে যোগাযোগ করার মাধ্যমে। আপনার যদি প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে জানা শোনা থাকে তাহলে আপনি নিজেই আপনার ভুলে যাওয়া পিন ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন। ব্যাংকে যেতে না চাইলে ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল দিয়ে একাউন্ট পুনরায় সচল করা যায় এবং আপনার পিন নাম্বার ফেরত আনতে পারবেন। এছাড়াও উক্ত ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে আপনার পিন নাম্বার পূনঃরুদ্ধার করতে পারবেন।
দ্বিতীয়ত সরাসরি ব্যাংকে যোগাযোগ করার মাধ্যমে। আপনার নিজের যদি কোনো সংশয় থাকে যে আপনি নিজে নিজে পিন পুনরুদ্ধার করতে পারবেন না, তাহলে আপনি সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে যোগাযোগ করলে আপনার পিন ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে পিন রিকোভার করার জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে কেননা আপনাকে প্রমাণ করতে হবে উক্ত কার্ডের মালিক কেবলমাত্র আপনিই।
এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় যা খেয়াল রাখা জরুরি:
যেহেতু টাকা পয়সার সাথে সম্পর্কিত বিষয়, তাই সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। টাকা উত্তোলন করার সময় বিভিন্ন কারণে জটিলতার মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা আছে। আর এ কারণে এটিএম বুথ থেকে টাকা উইথড্র করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা অত্যন্ত আবশ্যক।
(১) বারবার ভুল পিন প্রদান থেকে বিরত থাকা
এটিএম মেশিনে আপনি পিন ইনপুট করলেন, কিন্তু সেটা ভুল হলো, আপনার উইথড্র প্রসেসিং হলো না। সেক্ষেত্রে দুইবারের বেশি চেষ্টা করা উচিৎ নয়। কেননা বারবার ভুল পিন প্রদান এর কারনে আপনার এটিএম কার্ড ব্লক হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অধিকবার ভুল পিন প্রদান এর কারনে কার্ড এটিএম বুথ মেশিনে আটকে যেতে পারে, যা আরো বেশি ঝামেলার সৃষ্টি করবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে টাকা উত্তোলন করার ক্ষেত্রে পিন সংক্রান্ত জটিলতা এড়ানোর জন্য ব্যাংকের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করা উচিৎ।
(২) এক্সট্রা চার্জ এড়িয়ে চলা
ক্রস ব্যাংকিং এর ফলে এক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে আপনি অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উইথড্র করতে পারবেন। তবে এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ করা হয় যা বাড়তি ঝামেলার মতো মনে হবে। তাই যতটা সম্ভব অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উইথড্র করার পরিবর্তে কষ্ট করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বুথ খুঁজে নিয়ে টাকা উইথড্র করাই উত্তম।
(৩) কার্ড নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা
কার্ডের নেটওয়ার্ক এর উপর আসলে নির্ভর করে আপনি কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উইথড্র করতে পারবেন কিনা! যেমন যদি ভিসা কার্ড ব্যবহার করে থাকেন তবে ভিসা নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে এমন বুথ থেকে টাকা উইথড্র করতে হবে। অন্যথায় টাকা উইথড্র করতে পারবেন না। তাই কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উইথড্র করার আগে আপনার কার্ড নেটওয়ার্ক নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
(৪) পিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
এটিএম কার্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর পিন নাম্বার। কেউ আপনার পিন নাম্বার জেনে গেলে খুব সহজেই আপনার কার্ডের মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার বা টাকা উইথড্র করতে পারবে। তাই পিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটিএম বুথে কার্ড প্লেস করানোর সময় আশেপাশে কেউ আছে কিনা তা ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা পাবলিক প্লেইস হিসাবে অনেক মানুষের আনাগোনা থাকতেই পারে। তাই পিনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ।
(৫) বুথ আউট অফ সার্ভিস কিনা চেক করা
এটিএম বুথ মেশিন আউট অফ সার্ভিস থাকার কারণে কাঙ্ক্ষিত সার্ভিস পাওয়া যায় না। তাই কার্ড কাজ না করলে মেশিন আউট অফ সার্ভিস কিনা জেনে নেওয়া জরুরি।
(৬) সময় সম্পর্কে সচেষ্ট থাকা
লেনদেনের পর এটিএম বুথে নির্দিষ্ট সময় পর টাকা, কার্ড এবং রিসিপ্ট নিতে হবে তা জানা জরুরি। কেননা কালক্ষেপণ হলে বুথ মেশিন সেগুলো আবার ভিতরে টেনে নিতে পারে। তাই এমন জটিলতা এড়িয়ে চলার জন্য টাকা, কার্ড এবং রিসিপ্ট বের হওয়ার সাথে সাথেই তা নিয়ে নিতে হবে।
(৭) কার্ডের ডিটেইলস শেয়ার না করা
আমরা অনেক সময় ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে কার্ডের ডিটেইলস শেয়ার করে থাকি লেনদেন সম্পাদন এর জন্য। কিন্তু এই কাজটি করা বোকামি এবং সম্পূর্ণ ভুল। কখনো কার্ডের পুরো নাম্বার, ওটিপি, পিন কারো সাথে শেয়ার করা উচিৎ না। পরিচিত কিংবা অপরিচিত নয় এমনকি ব্যাংকের কোনো কর্মীর সাথেও না। অনেক সময় দেখা যায় ব্যাংকের পরিচয়ে আপনার কার্ডের তথ্য জালিয়াতির খপ্পরে পড়তে পারেন। তাই কার্ডের যে কোনো ধরনের তথ্য শেয়ার করা থেকে একেবারেই বিরত থাকতে হবে।
এটিএম কার্ডের সুবিধাসমুহ
এবার আসা যাক এটিএম কার্ডের মাধ্যমে আমরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকি:
(১) এটিএম কার্ডের মাধ্যমে দিনরাত ২৪ ঘন্টা খুব দ্রুত টাকা উইথড্র করা যায়। ব্যাংকে সশরীরে গিয়ে টাকা তোলার ক্ষেত্রে অনেক সময় যায় এবং ঝামেলাও পড়তে হয় মাঝে মধ্যে। সেই জায়গায় এটিএম কার্ড ঝামেলাবিহীন এবং আমাদের সময় ও বাঁচিয়ে দেয়।
(২) এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড বিল, পে ট্যাক্স মোবাইল ফোন চার্জ ইত্যাদির অর্থ প্রদান করা যায়।
(৩) ব্যাংক একাউন্টের ছোট্ট স্টেটমেন্ট পাওয়ার সুবিধা রয়েছে এটিএম কার্ডে।
(৪) এটিএম কার্ড ভ্রমণকারীদের জন্য খুব উপকারী। ভ্রমণকারীদের সাথে আলাদা করে টাকা নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এটিএম কার্ড সাথে থাকলে যেকোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই টাকা উইথড্র করা যায়।
(৫) নগদ অর্থ হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই, রিস্ক ফ্রী।
(৬) কেনাকাটার ক্ষেত্রে এটিএম কার্ড দারুণ এক আবিষ্কার। শপিং পেমেন্ট, এবং অতিরিক্ত খরচ করলেও ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে পেমেন্ট করা যায়।
এটিএম কার্ডের অসুবিধা সমূহ
এটিএম কার্ডের অনেক সুবিধা থাকলেও বেশকিছু জটিলতা এবং অসুবিধা আছে।
(১) এটিএম কার্ড চুরি বা হারিয়ে গেলে ঝুঁকি থাকে কেননা কার্ডের অপব্যবহার হতে পারে।
(২) এটিএম কার্ডের পিন নাম্বার কেউ জেনে গেলে ব্যাংকের সমস্ত সঞ্চয় হারাতে পারেন।
(৩) এটিএম কার্ড ব্যবহার করার একটা সময়সীমা আছে। এই সীমা অতিক্রম করলে চার্জ প্রদান করতে হয়।
(৪) টাকা উত্তোলন এবং ক্যাশ ডিপোজিট এর ক্ষেত্রে এটিএম কার্ডে সীমাবদ্ধতা আছে। সরাসরি ব্যাংকের চাইতে কম পরিমাণ টাকা উইথড্র করা যায় তেমনি ডিপোজিট ও।
এটিএম বুথ থেকে কত টাকা তোলা যায়?
বর্তমান বাংলাদেশে এটিএম কার্ড দিয়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত তোলা যায়। আবার কোনো কোনো ব্যাংকে ৫০ হাজার পর্যন্ত তোলা যায়। এটা আসলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী নির্ধারিত। তবে একসাথে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা তোলা যায়। এটিএম বুথ মেশিনে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট থাকে। কোনো খুচরা না থাকায় ৫০০ এর গুণিতক পরিমাণে টাকা উত্তোলন করা যায়।
এটিএম কার্ড নিয়ে কিছু অজানা বিষয়াবলি!
এটিএম কার্ড নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই অনেক ধরনের প্রশ্ন জাগতে পারে। সবাচাইতে কমন প্রশ্ন টা হলো এটিএম কার্ডের সাথে সুদের সংশ্লিষ্টতা কি! বা এটিএম কার্ড ব্যবহার করলে সুদ প্রদান করতে হবে কিনা! উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। সুদ প্রদান করতে হবে। কেননা সুদ নেওয়ার জন্যেই ব্যাংক আপনাকে এই অতিরিক্ত টাকা ব্যবহার করার সুযোগ দিবে। কেবলমাত্র ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদ প্রদান করতে হয়। তবে ডেবিট কার্ড ব্যবহারে কোনো সুদ প্রদান করতে হয় না। এক্ষেত্রে আপনার যে পরিমাণ টাকা জমা থাকবে আপনি ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করতে পারবেন।
এই আর্টিকেলে এটিএম কার্ড নিয়ে যাবতীয় আলোচনা বিশদভাবে করা হয়েছে। এটিএম কার্ড নিয়ে মোটামুটি সকল ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এই আর্টিকেলে আশা করি। নির্ভূল তথ্য দিয়ে আর্টিকেল টি সাজানো হয়েছে। এটিএম কার্ড নিয়ে বিস্তারিত জানার ক্ষেত্রে এই আর্টিকেল টি যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।
লেখা ও গবেষণা: মিজি জুলহাস হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক (লিপির আলো)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0মন্তব্যসমূহ