শবে বরাত মানে রুটি মাংস খাওয়ার উৎসব নয়, আল্লাহর ইবাদতে কাটুক পবিত্র এই রজনী

লিপির আলো
By -
0
Shabba-e-Barat -is -not a- festival-lipiralo


আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ এর রজনী বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত। 


শবে বরাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহু তা'য়ালা বলেছেন, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-৫)। মুফাসসিরগণ বলেন: এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলতে শাবান মাসের পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। 


হাদিস শরিফে আছে, ‘হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ ( ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)। 


শবে বরাতের তাৎপর্য ও ফজিলত:

হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়শা! তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।


হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া–বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি: ৭৩৯)।


রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। নবী করিম (সা.) আরো বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’ এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তা'য়া মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)।


শবে বরাতকে কেন্দ্র করে প্রচলিত উৎসব:

ভারতীয় উপমহাদেশে তথা বাংলাদেশে শবে বরাতের দিন ধুম ধাম করে পিঠা-পুলি,মাংস,হালুয়া,বিরিয়ানি,খিচুড়ি ইত্যাদি খাওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। শবে বরাত এর দিন এসকল খাবার খেতেই হবে এমন কোনো বিষয় হাদিসে বর্ণিত নেই। এই রাতে যারা এক রাকাআত নফল নামাজও আদায় করেন না। তারাও এই সামাজিক উৎসবে সামিল হন। যা কখনোই শোভনীয় নয়। আপনি অবশ্যই ভালো খাবার খান এতে দোষের কিছু নেই। তবে এ মহমান্বিত রজনীতে ইবাদতের মধ্যে দিয়েই আমাদেরকে কাটাতে হবে। আতশ বাজি ফুটিয়ে, পার্টি করে এই পবিত্র রজনীকে কলুষিত করা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।  


মনে রাখতে হবে, লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতের রজনী হলো গোনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার রজনী। আল্লাহুর কাছে আর্জি জানানোর রজনী। আমরা সবাই তাই এই পবিত্র রজনীতে আল্লাহু তা'য়ালার কাছে আমাদের জীবনের সকল গোনাহের জন্য ক্ষমা চাইব এবং আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতর জীবন যেন সফল হয় তার জন্য দোয়া করব। আল্লাহু পাক সকল মুসলিম নর-নারীকে এই রাতে তার ইবাদত করার তৌফিক দান করুক। আমিন।


মুহাম্মদ বাবলু 

সম্পাদক, লিপির আলো


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)