আচ্ছা সব রহস্যেরই কি ব্যাখ্যা হয়? হয় না বোধহয়। পৃথিবীতেই এমন কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছে, বিজ্ঞান যার কোনও ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি। ফলে শুধু রহস্যে আবৃত হয়েই থেকে গিয়েছে সেইসব ঘটনা। পাঠক এমন কিছু রহস্যময় ঘটনা নিয়েই আমার আজকের আর্টিকেল।
সবুজ রঙের ভাই-বোন, কারা তারা?
ঘটনা আজকের নয়। সেই দ্বাদশ শতাব্দীর। ইংল্যান্ডের উলপিট এলাকা। সেখানে হঠাৎ একজোড়া ভাই বোনের এসে উদয় হল। অবাক হওয়ার বিষয় হল, এরা সবদিক থেকেই আলাদা। সাধারণ মানুষের মতো দেখতে ছিল বটে, তবে তাদের গায়ের রং ছিল অস্বাভাবিক সবুজ রঙের। দুই ভাই-বোনের কথাও কেউ বুঝত না। কারণ তাঁরা অজানা এক ভাষায় কথা বলত, পোশাকও ছিল অদ্ভূত। আর খাবার? তারা কেবল কাঁচা শিম খেত। কিছুদিন পরই অবশ্য ভাইটি মারা যায়, বেঁচে থাকে বোন। মেয়েটিকে ধীরে ধীরে ইংরেজি ভাষা শেখানো হয়। খাওয়ানো হয় অন্যান্য খাবারও। ধীরে-ধীরে মেয়েটির গায়ের সবুজ রং পরিবর্তন হতে শুরু করে। বাকিদের সে জানায়, দুই ভাই-বোন সেন্ট মার্টিন্স ল্যান্ড থেকে এসেছে। তার কথায়, সেন্ট মার্টিন্স হল মাটির নিচে থাকা এক রাজ্য, যেখানে সবার গায়ের রং সবুজ। অনেকেই তার কথা বিশ্বাস করেনি, বহু বিশেষজ্ঞও এই ভাই-বোনের পুরনো জীবন সম্বন্ধে খোঁজ চালিয়েছিলেন, কিন্তু কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেকেই আবার তাদের ভিনগ্রহের প্রাণী বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু রহস্যের কোনও সমাধান হয়নি আজও।
১৯৪১ সালের ছবিতে কিভাবে আজকের দুনিয়ার কেউ?
দেখে মনে হতে পারে সাধারণ একটি ছবি। কিন্তু না, ভালো করে দেখলে চোখে পড়তে পারে অদ্ভূত ও অস্বাভাবিক কিছু বিষয়। কী তা? ১৯৪১ সালে কানাডার গোল্ড ব্রিজ থেকে একটি ছবি তোলা হয়। সেই ছবিতে আরও অনেকের সঙ্গে ছিলেন একজন ব্যক্তি, কিন্তু তিনি সকলের থেকেই আলাদা। বাকিদের পোশাকের সঙ্গে ওই ব্যক্তির পোশাকের কোনও মিলই নেই। মানে ওই ব্যক্তির পোশাক মোটেই ১৯৪১ সালের মতো নয়, বরং তাঁর পোশাক অনেক বেশি এখনকার দিনের মতো। ব্যক্তিটির পরনে ছিল একটি চেন লাগানো হুডি, টি-শার্ট। অবাক করার বিষয় এখানেই শেষ নয়, কারণ ১৯৪১ সালের ওই সময়ে মানুষটির হাতে ছিল একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা! কী করে সম্ভব? ওই ছবির পর ব্যক্তিটিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৩৯ জন মানুষ, একটা বিমান। কোথায় গেল?
এই ঘটনা কিন্তু একেবারেই সাম্প্রতিক। মানে ২০১৪ সালের। এখনও প্রায় সকলেরই মনে থাকার কথা। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০। ৮ মার্চ, ২০১৪। মালয়েশিয়া থেকে বেজিং যাচ্ছিল বিমানটি। ছিলেন ২২৭ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু। বিমানের ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে চালকের শেষ ভয়েস কানেকশন ঘটে টেক অফের এক ঘণ্টা পর এবং তারপরই রাডার থেকে বিমানটি নিখোঁজ হয় কয়েক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে। মালয়েশিয়ার সামরিক রাডারটি প্রায় এক ঘণ্টা পর বিমানটি ট্র্যাক করে যখন আন্দামান সাগর পর্যন্ত রাডারের মধ্যে ছিল বিমানটি। অথচ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও সংকটের সংকেত, খারাপ আবহাওয়ার সতর্কবাণী বা প্রযুক্তিগত কোন সমস্যার কথা বলাই হয়নি। অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ভারত মহাসাগরেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এই বিমানটি। সেই অনুযায়ী দীর্ঘ অনুসন্ধান চালানো হয়। কিন্তু বিমানের সামান্য কোনও ধ্বংসাবশেষও পাওয়া যায়নি। তাহলে কোথায় গেল বিমানটি? আজও তা জানা যায়নি।
শিবপুরের ভাসমান পাথর!
ভারতের মহারাষ্ট্রের এক ছোট্ট গ্রাম শিবপুর। গ্রামটি বিখ্যাত কামার আলী দরবেশ নামের একজন পীরের মাজারের জন্য। আর মাজারটি বিখ্যাত একটি বিশেষ পাথরের জন্য। ২০০ কিলোগ্রামের একটি পাথর রয়েছে সেখানে। এই পাথরটিকে তার স্থান থেকে তোলা বা সরানোর রয়েছে একটি মাত্র উপায়। ১১ জন মানুষ তাঁদের তর্জনী দিয়ে পাথরটি স্পর্শ করে সাধুর নাম উচ্চারণ করলেই হাওয়ায় ভেসে ওঠে সেই পাথর! অন্য যে কোনো উপায়ে তা সে যতই শক্তিশালী হোক, এক চুলও সরাতে পারেনি পাথরটিকে। ভক্তদের মতে কামার আলী দরবেশ নিজে মন্ত্রঃপূত করে রেখেছেন এই পবিত্র পাথর। এই রহস্য আজও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
দ্য হাম'- কিসের আওয়াজ ছিল?
১৯৬০ সালে ঘটেছিল এই ঘটনা। বিশেষত কানাডা, নিউ ম্যাক্সিকো, স্কটল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেকেই এক অদ্ভূত শব্দ শুনতে পেয়েছিল। অনেকটা যেন গাড়ির ইঞ্জিন চলার মতো শব্দ। এমন সে শব্দ, কানে তুলো গুঁজে রাখলেও শোনা যেত, কিন্তু সব মানুষ সেই আওয়াজ শুনতে পেতেন না। শব্দটির নামকরণ করা হয় দ্য হাম। জানা যায়, শতকরা মাত্র ২ ভাগ মানুষ 'হাম' শুনতে পেতেন। সাধারণত বাড়ির ভিতরে থাকার সময় এবং গভীর রাতে হামের আওয়াজ আরও জোরে শোনা যেত বলে জানিয়েছেন সেই সব মানুষরা। হামের কারণে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কিংবা অতিপ্রাকৃত ব্যখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বিস্তর। এমনকী পাথরে পরিণত হওয়া হিপ্পিদের কান্না, জনগণের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে সরকারের কূটকৌশল, মাটির নিচে থাকা ভিনগ্রহীদের যান UFO-এর ইঞ্জিনের শব্দ বলেও অভিহিত করা হয় 'হাম'কে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই শব্দের কোনও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা বা কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0মন্তব্যসমূহ