রাত ১২ টা । আপনি একা একটি রাস্তা দিয়ে বাড়িতে ফিরছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই আপনি একটি স্মেল পেলেন। কিন্তু গন্ধটা ঠিক কোথা থেকে আসছে তা ঠিক বুঝে উঠতে পাচ্ছেন না। কিংবা হাটার সময় মনে হচ্ছে কেউ আপনার সাথে সাথে হাঁটছে। আপনি পিছনে ফিরে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না। আমরা এটিকে অনেক সময় মনের ভুল বা ভৌতিক ঘটনা বলে থাকি। আসলেই কি এটি নিছকই কোনো ভৌতিক ঘটনা?
আবার ধরেন আপনি রাতে শুয়ে থাকার সময় প্রায়ই মাঝ রাতে পায়ের শব্দ শুনতে পান। কিন্তু শব্দটা ঠিক কোথা থেকে আসছে সেটি বুঝতে পারেন না। অথবা মনে হয় কেউ আপনাকে ডাকছে। কিন্তু আপনি তাকে খুঁজে পান না। কিংবা হয়তো আপনার সাথে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে আপনি সবসময় আগে থেকেই যেসব কথা কল্পনা করেন বাস্তবেও ঠিক তাই ঘটে। ধরুন আপনি কাউকে বললেন আজকে বৃষ্টি নামবে এবং আপনার কথা মত ঠিকই সেদিন বৃষ্টি নামলো।
আমাদের কারো কারো সাথে কিন্তু এমন নানা অদ্ভুত ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। যাকে আমরা নিছকই Coincidence অথবা ভৌতিক ঘটনা বলে উড়িয়ে দেই৷ কিন্তু না এগুলো কেবল নিছক মনের ভুল কিংবা ভৌতিক ঘটনা নয়। বিজ্ঞানীরা এর কারণ অনুসন্ধান করে দেখেছে, এমনটা অনুভব হয় আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জাগ্রত হবার কারণেই। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়! বা Sixth Sense! কি সেটা? কিভাবেই বা আমাদের মধ্যে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জাগ্রত হয়। এসব নিয়েই আমাদের আজকের ব্লগ।
আমরা হয়তো অনেকেই জানি মানুষের চোখ,নাক,কান,জিহ্বা ও ত্বক এই পাঁচটি ইন্দ্রিয় রয়েছে। অথাৎ মানুষ এই পাঁচটি অঙ্গের সাহায্যে সব কিছুর উপস্থিতি যেমন দেখা, শোনা স্বাদ, ঘ্রাণ এবং ঠান্ডা, গরম ইত্যাদি অনুভব করে থাকে। কিন্তু এই পাঁচটি ইন্দ্রিয় ছাড়াও মানুষের আরো একটি ইন্দ্রিয় রয়েছে আর সেটিই হলো ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়! এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে আবার অনেকেই অন্তর চক্ষু কিংবা ত্রিনয়নও বলে থাকে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে যে, এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সব মানুষের ভিতরেই সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তবে সব মানুষ সব সময় চাইলেই এই বিশেষ অঙ্গকে ব্যাবহার করতে পারে না।
সেই প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীতে এমন কিছু কিছু মানুষ আছে যারা মানুষের ভবিষ্যৎ বা অতীত দেখতে পায়। আবার কেউ কেউ আছে যারা রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফুলের ঘ্রাণ কিংবা একটা গন্ধ অনুভব করে। কেউ কেউ বলে তারা রাতে হাঁটার শব্দ বা নুপুরের শব্দ পায়। এরা সবাই হলো ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অধিকারি।এই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে যুগ যুগ ধরে অনেক সাধক, ফকির- জ্বীন, পরিদের সাথে কথা বলে মানুষের চিকিৎসা দিয়ে আসছে, হারানো জিনিস খুঁজে দিচ্ছে। তবে অনেক ভুয়া এবং অসাধু ধর্ম ব্যবসায়ীরাও হাজার বছর ধরে এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে রমরমা ব্যবসা করে আসছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে এই ব্যবসা কিন্তু আজো আমাদের নজরে পড়ার মত। বিশেষ কিছু বাবারা, যেমন: পাগলা বাবা, মাটি বাবা, ন্যাংটা বাবা, কাশিপুরের বাবা এমন অনেক ভন্ড বাবাই এই ক্ষমতা এর কথা বলে মানুষকে ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। ভারতীয় ওয়েব সিরিজ আশ্রম কিংবা পিকে এই মুভিগুলো দেখলেই এই বিষয়টা আপনারা আরো ক্লিয়ার হতে পারবেন।
যাইহোক৷ প্রচলিত ধারণা হলো, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টি সাধারণত বিশেষ বিশেষ কিছু লোকের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। বিশেষ মুহূর্ত ছাড়া ওইসব লোকের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দেখা যায় না। অতিরিক্ত ইন্দ্রিয়ের অধিকারী ব্যক্তিরা তাঁর ‘তৃৃতীয় চক্ষু’ দ্বারা অদৃশ্য বস্তুকে অতি সহজেই দেখতে পারেন। গল্পের যাদুকর হুমায়ুন আহমেদও কিন্তু তার হিমু, মিসির আলি সহ প্রায় সব উপন্যাসেই এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এর বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তার গল্পের নায়ক হিমু থেকে মিসির আলি প্রায় সবাই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অধিকারী। হুমায়ুন আহমেদ এর দেবী উপন্যাসের উপর নির্মিত অনম বিশ্বাসের দেবী সিনেমাটা দেখলেই এই বিষয়টি আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।
এবার আসুন জানি এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কিভাবে গঠিত?
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টি পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে গঠিত। এই ইন্দ্রিয়গুলো হলো—টেলিপ্যাথি, সাইকোমেট্রি, ক্লিয়ার ভয়েস, রিকগনিশন ও প্রিকগনিশন।
টেলিপ্যাথি হলো মৌখিক ও লিখিত ছাড়াই লিখতে ও ভাবতে সাহায্য করে। সাইকোমেট্রি মানুষের ইতিহাস ও ব্যক্তিগত তথ্য জানতে সহায়তা করে। ক্লিয়ার ভয়েস অদৃশ্য বিষয় দেখতে সহায়তা করে। রিকগনিশন মানুষের অতীত জানতে সহায়তা করে। আর প্রিকগনিশন ভবিষ্যতে কী হবে বা করতে হবে, তা জানতে সহায়তা করে। অথাৎ এর মধ্যে যে কোনো একটি বিষয় আপনার মধ্যে থাকলে বুঝতে হবে আপনিও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অধিকারি। তবে এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কিন্তু কেবল আমাদের সমাজের প্রচলিত কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসই নয়। এটি বিজ্ঞান দ্বারাও প্রমাণিত। নেদারল্যান্ডসের ইউট্র্যাক্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক আটজন ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন।
আসুন এবার তাহলে জানি এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় মানব দেহের কোথায় থাকে? প্যারাসাইকোলজি অনুযায়ী, আমাদের মাথার খুলির নীচে একটি ছোট ছিদ্র আছে যাকে বলা হয় ব্রহ্মরান্ধ্র। সেখান থেকে একটা নাড়ি মেরুদণ্ড দিয়ে মুলধারায় চলে গেছে। এই নাড়িটিকে সাতটি চক্র এবং ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কেন্দ্র বলে মনে করা হয়। সাধারণত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সুপ্ত অবস্থায় থাকে, এটি বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে জাগ্রত হয়।
আচ্ছা যদি এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আপনার মধ্যে থাকে এবং আপনি এটি কোনো ভাবে জাগ্রত করতে পারেন। তখন আসলে কি ঘটবে?
বিজ্ঞানীরা বলেন-
-আপনি তখন ভবিষ্যৎ দেখতে পারবেন।
- আপনি কয়েক মাইল দূরে বসে একজন ব্যক্তির কথা শুনে আন্দাজ করতে পারবেন তার মনে কী ভাবনা চলছে।
- এর ফলে আপনি নানারকম অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন।
এখন আপনাদেরকে আরেকটা অবাক করা তথ্য দেই, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষ চাইলেই তাদের ভিতরের সুপ্ত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে গভীর ধ্যান বা মেডিটেশন এর মাধ্যমে জাগ্রত করতে পারে। আর তাই বলবো, আপনিও চাইলে কিন্তু আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে এমন অলৌকিক শক্তির অধিকারি হতে পারেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0মন্তব্যসমূহ