আসুন একটি গল্প দিয়ে শুরু করি। রাত ১২ টা। আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। পুলিশ চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় হঠাৎ একজন পুলিশ আমাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাই? আমি তাকে বললাম আমার এক মেয়ে বন্ধুর বাসায় যাবো। একথা শুনে পুলিশ আমার দিকে কটু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি বললাম এতে এমন ভাবে দেখার কি আছে? আমি একজন মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের বাসায় যেতেই তো পারি। পুলিশ এবার ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো পাগল নাকি? আমি বললাম আমি পাগল না, আমি দেখতে ছেলের মত হলেও ভিতরে ভিতরে একজন মেয়ে। একথা শুনে পুলিশ আমাকে নেশাখোর ভেবে গ্রেফতার করলো। এরপর পাগল ভেবে কিছু সময় পর ছেড়ে দিলো। তারপর আমি আমার এক মেয়ে বন্ধুর বাসায় গিয়ে কলিং বেল দিলাম। মেয়ে বন্ধুর বাবা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি চাই এত রাতে? আমি বললাম আমি আপনার মেয়ের ভার্সিটি ফ্রেন্ড। আমাদের বাড়ি ভর্তি মেহমান। আজকে রাতটা আমি আপনার মেয়ের সাথে থাকতে চাই। একথা শুনে লোকটা যেন আকাশ থেকে পড়লো। এরপর আমাকে ধমক দিয়ে বললো, ছেলে তোমার সাহস তো কম নয়! আমি বললাম আংকেল আপনি ভুল করছেন। আমি দেখতে ছেলে হলেও মনে মনে একজন মেয়ে। একজন মেয়ে হয়ে একজন মেয়ের কাছে তো থাকতেই পারি। এতে দোষের কি আছে। একথা শুনে আমার মেয়ে বন্ধুর বাবা বাড়িতে চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিলো। তারপর দারোয়ানকে দিয়ে আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। যারা ট্র্যান্সজেন্ডারের পক্ষে বড় বড় লেকচার দিচ্ছেন এবং যারা মনে করেন শারীরিক চিহ্ন দিয়ে নয় মানসিক চাহিদা দিয়ে নারী পুরুষ নির্ধারণ করা উচিৎ তাদেরকে বলছি আপনাদের বাড়িতেও যদি মাঝ রাতে এমন একজন ছেলে আপনার মেয়ের সাথে ঘুমাতে আসে। তখন কি আপনি দেবেন আপনার মেয়ের সাথে তাকে ঘুমাতে? তর্কের খাতিরে আপনি যাই বলুন না কেন আপনি নিজে যদি একজন ট্র্যান্সজেন্ডার না হোন তবে কখনোই আপনি এমন কাজ করতে পারবেন না। আমার ধারণা আপনারা যারা ট্র্যান্সজেন্ডারের পক্ষে কথা বলছেন তারা তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) এবং ট্র্যান্সজেন্ডারকে একসাথে গুলিয়ে ফেলছেন। এ বিষয়ে আমাদেরকে আগে পরিষ্কার হতে হবে। তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) কারা?
হিজড়া হওয়া দোষের কিছু নয়। এটি একটি শিশুর জন্মগত সেক্সুয়াল ডিসঅর্ডার। আমাদের সমাজে অনেক শিশুই শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাদেরকে আমরা শারীরিক প্রতিবন্ধী বলি। অথাৎ একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে কিছু শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
মনে রাখতে হবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা হিজড়ারা কিন্তু ট্র্যান্সজেন্ডার নয়। তাহলে ট্র্যান্সজেন্ডার কারা? ট্র্যান্সজেন্ডারের অর্থ লিঙ্গ পরিবর্তন। অথাৎ একজন ছেলে অপারেশনের মাধ্যমে তার লিঙ্গ পরিবর্তন করে মেয়ে হয়ে গেলো। এবং সে নিজেকে একজন মেয়ে ভাবতে শুরু করলো। কিংবা একজন মেয়ে সার্জারীর মাধ্যমে ছেলেতে রুপান্তরিত হলো এবং নিজেকে ছেলে দাবি করতে শুরু করলো।
আপনার লাইফ আপনার মর্জি। আপনি ছেলে থেকে মেয়ে হলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা আছে। এই মহাবিশ্বে এমন কিছু প্রাকৃতিক ব্যাপার রয়েছে যার কোনো কিছু পরিবর্তন করলে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। উদাহরণ দিয়ে বলি আপনি যদি মনে করেন পৃথিবীতে বন জঙ্গল রেখে লাভ কি সব কেটে ফেলি। এমনটা আপনি ধরেন করেই ফেললেন তারপর কি হবে? এমনটা ঘটলে জীবজগৎ এর সব জীব অক্সিজেন এর অভাবে কিংবা অতি বৃষ্টি বা অতি খরার কবলে পড়ে মারা যাবে। তেমনি আপনি যদি সমাজে ট্র্যান্সজেন্ডার প্রতিষ্ঠিত করেন তবে একসময় পৃথিবীতে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ সব মানুষ যদি ধীরে ধীরে ট্র্যান্সজেন্ডার হয়ে যায় তাহলে মানব প্রজন্ম বা বংশ বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এবং সমাজের সকল নিয়ম-নীতি ট্র্যান্সজেন্ডারদের মত রুপান্তরিত হওয়ার ফলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই বলা যায় ট্র্যান্সজেন্ডার মানব সমাজের জন্য অভিশাপ স্বরুপ।
তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) তাদেরকে কি অবহেলা করা উচিৎ?
কখনোই নয়। কারণ তাদের এই অবস্থার জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয়। এটি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। এটি একটি প্রতিবন্ধকতা বা রোগ। আমাদের পরিবারে প্রতিবন্ধী সন্তান থাকলে আমরা কি তাকে রাস্তায় ফেলে দেই? কিংবা সমাজের ভয়ে দূরে সরিয়ে দেই? সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করি? যদি না করে থাকি তবে তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) তাদের ক্ষেত্রে এমনটা করে থাকি কেন? তৃতীয় লিঙ্গের সন্তানের প্রতি সামাজিক অবজ্ঞার এই দৃষ্টি পরিবর্তন করতে হবে। ছোট থেকেই তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং পরিবারের অন্য শিশুদের সাথে রেখেই বড় করতে হবে। লেখাপড়া শেখাতে হবে। সম্পত্তির অংশীদারত্ব দিতে হবে। এবং রাষ্ট্রেরও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের জন্য তৃতীয় লিঙ্গ ভাতা চালু করতে হবে। তাহলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা এবং অপরাধ যেমন কমে আসবে তেমনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও একটি সুন্দর জীবন পাবে।
অন্যদিকে মানব সমাজের জন্য অভিশপ্ত ট্র্যান্সজেন্ডারকে না বলতে হবে। কি কারণে এই কমিউনিটি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না। তার কারণ নিশ্চয়ই আপনারা এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন। একটা কথা মনে রাখবেন এই মহা বিশ্বে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু চাইলেই তার মন মর্জি মত কখনোই চলতে পারে না। সূর্য যেমন চাইলেই রাতে আলো দিতে পারে না। তেমনি মানুষ মনে মনে ভাবলেই ছেলে থেকে মেয়ে কিংবা মেয়ে থেকে ছেলেতে রুপান্তরিত হতে পারে না। কিছু মস্তিষ্ক বিকাশগ্রস্থ মাদকাসক্ত ট্র্যান্সজেন্ডারবাদী মানুষের কথায় কান দিয়ে আপনার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিনষ্ট করা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন।
কলাম - লিপির আলো
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0মন্তব্যসমূহ